বড্ড অবেলায় মহাকালব্যাপীয়া অন্তহীন প্রস্থান |

তাওসিফ এন আকবর: তার নিজের একটা স্বপ্ন ছিল, তাকে ঘিরে অনেক মানুষের স্বপ্ন ছিল, কতশত আশা ছিল, পিতামাতার ভালোবাসা ছিল। আমাদের মাঝে মানুষটা ছিল। হ্যাঁ! বলছি একজন সাকিবের কথা। ওর সহপাঠীদের একজন ভালো বন্ধুর কথা, ওদের একজন সহযোদ্ধার কথা।

আজ ও নেই, বন্ধুদের আড্ডায় আসর জমিয়ে রাখা মানুষটা নেই। একজন সহযোদ্ধা নেই। খেলার মাঠ থেকে রাজনীতির প্রাঙ্গন কোথায় ছিলনা ছেলেটা? বন্ধুদের ছবির ফ্রেমের একটি জায়গাকে ধূসর ফাঁকা করে চলে গেছে সে। এমন কোনো দেশে-যেখান থেকে কেউ কখনো ফেরেনা।

অথচ এসব আজ এতবছর পরেও যেন বিশ্বাস হতে চায়না সাকিবের কাছের বন্ধু শামিমের। অনেক সমীকরণ বদলে গেছে। স্বার্থপর পৃথিবী আওড়াতে আওড়াতেও আমরা দেখেছি নগন্য ভুলে যাওয়াদের সংখ্যাকে ছাপিয়ে বিপুল সংখ্যক স্নেহের ভাই-বন্ধু, সহকর্মী-সহপাঠী আর জেষ্ঠ্যরা তাকে মনে রেখেছে। ওর মারা যাওয়ার এই দিনে ওকে নিয়ে আবেগ আর আক্ষেপ প্রকাশ করেছে। অনেক অনেকদিন ওকে সবাই মনে রাখবে। ও গেঁথে থাকবে একটা ছোট্ট কোণে।

শামিমের বাসায় দেখলাম ওদের ছবি টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে, ওদের দুজনের স্মৃতির অনেক সংগ্রহ শোকেসে খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ফ্রেমের ছবিতে ওকে নিয়ে অনেক কথা লেখা রয়েছে। শামিমের মোবাইল ফোনের ওয়ালপেপারেও শোভিত ওদের দুজনের ছবি। এদিকে হাসিবেরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষণ বিরতিতে আক্ষেপ জানায়।এগুলো আমরা দেখেছি, এই দেখার বাইরেও অনেক আক্ষেপ আর আর্তনাদ আমাদের দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। সেটার পরিমাণও কোনো অংশে কম নয়।

ওকে দশমাস গর্ভে ধারণ করা সেই মায়ের বুকফাটা আর্তনাদের খোঁজ আমরা সত্যিই নেইনি। সাকিবের যে বাবা তাকে আঙ্গুল ধরে ধরে হাঁটতে শিখিয়েছে সেই পিতার হাহাকার যেচে কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি।

শুধুকি সাকিবের মা? শামিমের মা’ও ছেলের বন্ধুর অকালে চলে যাওয়াকে নিয়ে আক্ষেপ করেন। সহপাঠী সীমা ওর ব্যপারে বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরলো, কিছু বলতে পারছিলনা সে। নাম না জানা, খোঁজ না পাওয়া এমন কত আক্ষেপের খবরই আমরা রাখিনি। এত আক্ষেপের দিনে স্নেহাশিসের জন্য আমাদের করা হয়নি কিছুই। শুধু এই একটা লেখনী কখনোই যথেষ্ঠ নয়।

২০১৯ সালের ১৩ই জুন সকাল ১১.৫৫ এর দিকে ঘোষেরহাটে বন্ধুকে এগিয়ে দিয়ে ফেরার পথে আউরাপুলের কাছাকাছি স্থানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারায় সাকিব।

শেষ বলতে কিছু নেই, অনেক সময় ঝরা পাতা থেকে নতুন গাছের জন্ম নেয়- বিশ্বাস করা ছেলেটার গল্পটা শেষ হল খুব তাড়াতাড়ি; বড্ড অবেলায়। আনমনে একজন সাকিবের জন্য শামিমেরা অপেক্ষা করে, অপেক্ষা করে একজন ভালো বন্ধুর জন্য, একজন সহযোদ্ধার জন্য।

ফিরবেনা জেনেও অপেক্ষার এমন হৃদ্যতাকে আমরা নিছক ভালোবাসা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করে ন্যূনোক্তি করতে পারিনা, এটা ভালোবাসাকে ছাপিয়ে ভালোবাসার চেয়েও বেশি কিছু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *