মধু’র মহাকালের অমধুর আক্ষেপ ।
তাওসিফ এন আকবর: নবম শ্রেণীতে পরীক্ষা দিয়ে দশম শ্রেণীতে মধু। পুরো নাম আক্তারুজ্জামান গাজী মধু। পড়াশুনা করে একদিন বড় একজন ইঞ্জিনিয়ার হবে সেই স্বপ্ন বুনতো দিনরাত। মধুর সেই স্বপ্ন অমধুর হয় ২০১৯ সালের ১৩ই জুন।
সবে দশম শ্রেণিতে উঠেছে সে। ছোট খাট যে কোনো প্রতিকূল অবস্থায় মানিয়ে নেয়ার সময় বা মানসিকতার হিসেবে ক্লাস টেন (দশম শ্রেণী) কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। আর সেখানে মধু তো বাবাকেই হারিয়ে বসে আছে। তাও আবার এক বছর আগেই।নবম শ্রেণিতে উঠার শুরুর সময়ে।
যে বয়সটাতে তারুণ্যে উজ্জীবিত থাকার কথা, কৈশরের দুরন্তপনায় মেতে উঠার কথা সে বয়সটায় পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়ার মত কঠিন শব্দ আর উপদেশের ভারে নুয়ে পরেছে সব উদ্যমতা। পরিস্থিতির কাছে তারুণ্য, দুরন্তপনা যেন মরুঝড়ের বালির ন্যায় উড়ে গেছে।
মধুর পরিবার শুধু একজন অসম্ভব ভালো মানুষ মোঃমনিরুল ইসলাম গাজী’কে হারায়নি, হারিয়েছে একমাত্র উপার্জনক্ষম একজন জীবিকার নির্বাহককে, হারিয়েছে পরম মমতায় আগলে রাখে এমন একজন মানুষকে। মধুর মা হারিয়েছেন (ধর্মীয় বিশ্বাস মতে) তার বেহেস্ত যে মানুষটার পায়ের নিচে সেই মানুষটাকে। যার দেওয়া সাহসের উপর ভর করে একদিন মেয়ে থেকে নারী হয়ে উঠেছেন, একটা ঘর সামলেছেন, একটা পরিবার গঠন করেছেন দুজনের ত্যাগের বিনিময়ে- সেই সাহস দেয়া মানুষটাকে।
একটি মেয়ের জীবনের প্রথম আদর্শ, প্রথম নায়ক তার বাবা। সেই আদর্শ আর অনুপ্রেরণার মানুষটাকে হারিয়ে হতবিহ্বল মধুর বোন তহমিনা আক্তার। অভিযোগের ঝুলি খুলে বসে আবদারের লম্বা তালিকা যার কাছে রাখবে সেই মানুষটা নেই। কোনো এক খুব ভোরে বিদ্যুৎ চমকানির ভয়ে বাবা বলে যাকে ডাকবে, দৌড়ে গিয়ে যার কাছে আশ্রয় নিবে, সেই মানুষটা নেই। মধুটার বাবা নেই, তাও আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল।
২০১৯ সালের ১৩ ই জুন সকাল ১১.৫৫ এর দিকে বাসার পাশের মাঠ থেকে গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে ফেরার পথে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মধুর বাবা মোঃ মনিরুল ইসলাম। অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিক এই ঘটনা ইন্দুরকানীতে অধিকাংশ মানুষের হৃদয়েই একটা শোকের স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে। সেই ঘটনার পাঁচটি বছর নিরবে কেটে গেছে, তবু বেদনা কমেনি এতটুকুও। ভালো থাকুক মধুর প্রিয় মানুষেরা; এপারে কিংবা ওপারে।