যে গল্পের নায়ক কেবল-ই মিরাজ !

তাওসিফ এন আকবর: একটা সময় ছিল যখন ইন্দুরকানী উপজেলা সমগ্র জেলায় কোনো প্রতিযোগিতায়-ই অন্যান্য উপজেলার সাথে ঠিক পেরে উঠত না। ক্রীড়া হোক, সাংস্কৃতিক হোক, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ধনকুবের কিংবা পুরো দেশে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কেউ। আমাদের শুধু নেই নেই আর নেই।

পুরো উপজেলায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিং নেই, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য নেই, মহাসড়ক নেই, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন নেই সহ; আরও অনেক থাকা উচিত বিষয়-ই নেই।

এত নেই এর মধ্যেও একটা নেই আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। পার্শ্ববর্তী যে কোনো উপজেলার সাথে খেলায় কিংবা প্রতিযোগিতায় যে নিয়মতান্ত্রিক নিশ্চিত হারের ইতিহাস ছিল, মাথা নত হয়ে যাওয়ার অভ্যস্ততা ছিল সেটা এখন আর আমাদের নেই।

ইতিহাসের ডায়েরিতে এটা নেই, সেটা নেই; তবু আমাদের আছে একটা উদীয়মান তরুণ তুর্কি ফুটবল দল। আমাদের আছে ভরসা করার মত এগারো জন। আছে আত্মবিশ্বাস।

সাদা-কালো কিংবা সদ্য রঙ্গিন বোকাবাক্সের যুগে আজকালকার বিশ্বকাপের আমেজে যখন আবাহনী আর মোহামেডানের খেলা হত রাজধানীতে।

সে সময়ে নদীর ওপাড়ের ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া কিংবা স্বরুপকাঠীতে তাদের মাঠে অথবা স্বাগতিক হয়ে নিজেদের মাটিতেও ইন্দুরকানীর যে সমর্থক নিজ দলের হার দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়েছিলেন সেই সমর্থকেরা হয়ত আজ আর নেই, হয়ত কেউ বিছানায় শয্যাশায়ী কিংবা দু’একজন এসেছিল লাঠি ভর করে মোটা চশমায়।

সেই তিনিও আজ ইন্দুরকানীর খেলোয়াড়দের তেজদ্বীপ্ত গোলবন্যায় আনন্দে বিমোহিত হয়ে ভেতরে ভেতরে উল্লাস করেছেন। প্রচন্ড নির্লিপ্ত গর্বে বুকটা ভরে উঠে সেকি মনে মনে বলে ফেলেনি “আমরা পারিনি, আমাদের ছেলেরা এখন মাঠে,পারলে এখন হারিয়ে দেখা?”।

কে জানে? হয়ত বলেই ফেলেছে মনে মনে। কেননা মাঠে যে আজ এই অঞ্চলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে মিরাজ-রিয়াজ’রা; ওরা ১১ জন।

বাপ-দাদার পেশা বদলে খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছেটা হয়ত এদের সবার ছিলও-না। ভাগ্যবিধাতার মুখ তুলে চাওয়ায় দিনবদলের শুরুটা আসলো মিরাজের হাত ধরে। হয়ত এখানেই শেষ হতে পারতো এই গল্প। কিন্তু মিরাজ সেটা হতে দেননি। নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়েছেন সেখানে না পারলেও এই অবহেলিত জনপদের জন্য এগারোজনকে তৈরি করলেন।

আজ যখন মাঠে ওদেরকে দেখলাম পুরোটা সময় বল দখলে রেখে নাজিরপুরের গোলবারে হেসে-খেলে ৬ টা গোল ঠেলে দিতে। তখন আজ এই জনপদের একজন নাগরিক হিসেবে বাপ-দাদাদের আমলের সেই প্রতিবেশী বিজিতদেরকে বলতেই পারি” আসিস! খেলা হবে।”

এই কৃতিত্বটা মিরাজের।

[সম্পাদকীয়]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *