৩০ বছর ধরে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করছেন ইন্দুরকানীর সেকান্দার আলী

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা মুহাম্মদ সেকান্দার আলী গাজী। উপজেলাপূর্ব ইন্দুরকানীতে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষদের নিকট একটি ভরসার নাম ছিলো সেকান্দার আলী গাজী। অতীত কালবাচক “ছিলো” শব্দ অবশ্য তার ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তিনি ছিলেন, তিনি আছে এবং তিনি থাকবেন অসহায় মানুষদের ভরসা আর আশ্রয়স্থল হয়ে।

হাসপাতালে ভর্তির অবস্থা নেই, রোগী নিয়ে তৎকালীন সময়ে পিরোজপুর যাওয়ার টাকা নেই, গাড়ি ভাড়া নেই, ওষুষ কেনার সামর্থ্য নেই, জরুরি মূহুর্তে ওষুধের দোকান খোলা নেই সহ নানাবিধ নেই এর সমাধান ছিলেন, আছেন থাকবেন সেকান্দার গাজী।

জরুরি মূহুর্তে কাউকে দিয়েছেন প্রাথমিক চিকিৎসা, ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে হয়েছেন ভরসার কেউ, গাড়ি ভাড়ার টাকা কিংবা ওষুধ কেনার টাকা দিয়েছেন নিজের পকেট থেকে, কর্মস্থল থেকে পাওয়া এবং নিজে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে রাখতেন বাড়িতে। এরপর অসহায়দের দিতেন দুহাত ভরে।

শুরুটা ১৯৮৮ কিংবা ১৯৮৯ সালের দিকে। সেসময়ের বালিপাড়াতে মেডিকেল ক্যাম্পে কাজ করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষের অসুস্থতা এবং সাথে ঘিরে থাকা অসহায়ত্ব-দারিদ্রতা দেখেছেন নিজ চোখে। সেই দেখা কেবল দেখা হয়ে থাকেনি, অনূভুতি হয়ে হৃদয়ে কেটেছে দাগ। সেই দাগ থেকেই এতশত উদ্যোগ আর মহান কাজ। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে হয়, “” দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে দাগই ভালো”।


সে দশকে রাত-বিরেতেও উপজেলার নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন আসতো তাদের বাড়িতে একটু চিকিৎসা, আর্থিক সহায়তা কিংবা ওষুধের জন্য। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে গভীর রাত পর্যন্ত সাহায্যপ্রার্থী মানুষদের সিরিয়াল থাকতো তার বাড়িতে।


ছাত্রজীবনে ভান্ডারিয়ায় লজিং থেকে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকে এক ডাক্তারের সাথে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন পাকিস্তানে, এরপর মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশে ফিরে পিরোজপুরে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরি নেন। মঠবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বিভাগের হয়ে সেবা দিয়েছেন তিনি। যেখানেই গেছেন না কেন, ভোলেননি শেকরের মানুষদের দুঃখগাঁথা পরিস্থিতি। ছুটির বেলাতে তাই তাদের জন্য অন্তত ব্যাগে করে ওষুধ নিয়ে ফিরেছেন বাড়িতে। নব্বয়েইর দশকের ইন্দুরকানীতে সে সময় যেসকল ওষুধ কেনা কিংবা খুঁজে পাওয়ায় খুব একটা সহজ ছিলোনা সংখ্যায় অধিকাংশ নিম্নবিত্ত ইন্দুরকানীবাসীর জন্য।


সেকান্দার আলী গাজী অবসর গ্রহণ করেছেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে। চাকুরির অবসর ঘটলেও মানবতার অবসর ঘটেনি। পাড়ায়-মহল্লাহ আজকাল ওষুধের দোকান, ঘরের পাশে হাসপাতাল কিংবা পিরোজপুরের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির কারণে আগের সেই ভীড় না থাকলেও এখনও তিনি ওষুধ কিনে রাখেন তার বাড়িতে।


এই ওষুধের গ্রাহক এখনও সংখ্যায় কেমন তা আমরা জানতে চেষ্টা করেছি স্থানীয় মানুষদের কাছে। আগের মতো ভীড় না থাকলেও সংখ্যাটা যে একদম শূন্য নয় তা জানা গেলো তাদের কাছ থেকে। হাসপাতাল বন্ধ থাকা কিংবা হাসপাতাল থেকে যে ওষুধগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়না সেসব ওষুধের জন্য এখনও কিছু মানুষ আসেন তাদের বাড়িতে। যথাসম্ভব চেষ্টা করেন সহযোগিতা করার।


শুধু কি স্বাস্থ্যসেবা আর ওষুধ পথ্যের সহযোগিতা? অসহায় মানুষের মেয়ের বিয়ে দেওয়া, নতুন ব্যবসায় সাহায্য করা থেকে শুরু করে নানাবিধ সহযোগিতার কারণে লোকেরা তার কাছে আসেন। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, “চাকুরি থেকে বিরতি পেলেও অবসর নিতে পারেননি মানবতার চাকুরি থেকে”। স্থানীয় সচেতন ও সমমনা তরুণ-বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছেন চিকিৎসা সহায়তা সংগঠন “দরিদ্র চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা”। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে এখন ক্ষুদ্র-বৃহৎ সহ বিভিন্ন ধরণের রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা করা হয়। এখানে যে কেউ সদস্য হয়ে মানবসেবায় অংশগ্রহণ করতে কিংবা চিকিৎসা সহায়তা পেতে +880 1917-801402 নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির একজন মুখপাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *