
পিরোজপুর, স্বরূপকাঠি:
বাংলাদেশে যারা বিদেশি ‘ফ্লোটিং মার্কেট’ দেখে আফসোস করেন—তাদের জন্য সুখবর, বাংলাদেশেরই পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে রয়েছে এমনই এক অনন্য ভাসমান বাজার। বর্ষা মৌসুমে প্রাণ পায় এই হাট। নদীমাতৃক দেশের প্রকৃতি আর মানুষের জীবিকার মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে পেয়ারা আর আমড়ার এই ভাসমান বাজার।
স্বরূপকাঠি উপজেলার অন্তর্গত আটঘর, কুড়িয়ানা এবং ভীমরুলি এলাকায় প্রতিবছর বর্ষাকালে বসে পেয়ারা কেনাবেচার এক বিশাল বাজার। পুরো বাজারই চলে পানির ওপর। পাকা পেয়ারা বোঝাই ছোট ছোট ডিঙি নৌকা ভাসে খালের পানিতে, আর সেখানেই হয় বেচাকেনা।
এই অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবার পেয়ারা ও আমড়া চাষের সঙ্গে যুক্ত। বাগানের জমি বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায় বলে, দুপাশে মাটি তুলে বানানো হয় মোটা আইল। সেই আইলে সারি সারি পেয়ারা গাছ। গাছের দুপাশ দিয়ে তৈরি হয়ে যায় সরু সরু খাল, যেখানে চলে নৌকা।
বাগান মালিকেরা প্রতিদিন সকালেই নৌকা ভর্তি করে পেয়ারা নিয়ে বাজারে আসেন। পাইকাররা ইঞ্জিনচালিত বড় বড় বোটে এসে নৌকায় করে পেয়ারা কিনে নেন। বাজারে দাম নির্ধারিত হয় “মন” বা “নৌকা” ধরে। এই পদ্ধতি চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।
এই ভাসমান হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেনাবেচা চলে। পুরো পরিবেশটাই যেন এক গ্রামীণ উৎসব। চারপাশে পানি, নৌকা আর হাসিমুখে ফল বিক্রি করছেন কৃষকেরা—এই দৃশ্য অভাবনীয়। অনেক পর্যটক মনে করেন, এটি যেন বাস্তবতার ভেতরেই কোনো স্বপ্নের জায়গা।
বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম, অর্থাৎ জুলাই থেকে আগস্ট—এই সময়টি ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত। দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা তখন ভিড় করেন এই অঞ্চলে। শুধুমাত্র পেয়ারা নয়, এই অঞ্চল তার বিখ্যাত আমড়ার জন্যও পরিচিত। পেয়ারা শেষ হলেই শুরু হয় আমড়ার মৌসুম, অর্থাৎ বাজারের ব্যস্ততা থেমে থাকে না।
ভাসমান বাজার শুধু অর্থনীতির একটি রূপ নয়—এটি হয়ে উঠেছে পিরোজপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। আধুনিকতা ছুঁয়ে গেলেও এখানকার বাজার রয়ে গেছে পুরোপুরি প্রাকৃতিক ও সরল, যা আজকের দিনে হয়ে উঠেছে এক বড় আকর্ষণ।
লোকেশন:
ভাসমান বাজারটি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা ও ভীমরুলি এলাকায় অবস্থিত। এর মধ্যে ভীমরুলি বাজার সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয়।